,

‘একটা ভালো ঘরে শান্তিতে মরতে চাই’

জেলা প্রতিনিধি, লক্ষ্মীপুর: ‘বাবারে খুব কষ্টে আছি। প্রতিবেশীর জায়গায় লতা-পাতা দিয়া কোনোরকমে থাই (থাকি)। রাইতে (রাতে) বাতাসে গাও (শরীর) আত (হাত) ও পাও (পা) ঠান্ডা অইয়া (হয়ে) যায়। থরথর কইরা কাঁপি। অসুখ-বিসুখ লইয়া বাড়ি বাড়ি যাইতে পারি না। টেকার (টাকা) অভাবে ওষুধ কিনতে পারি না। এ জীবন আর ভালো লাগে নারে বাবা। একটা সরকারি ঘর পেলে শান্তিতে মরতে পারতাম।’

নিজের কষ্টের জীবনের কথা অশ্রুভেজা চোখে এভাবেই বললেন ৭০ বছর বয়সী বৃদ্ধা হাফেজা বেগম। ঠিকমতো হাঁটতেও পারেন না তিনি। শরীরে বাসা বেঁধেছে নানা অসুখ। মাঝে মধ্যে হারিয় ফেলেন স্মৃতি। একটু আহারের জন্য তাকিয়ে থাকতে হয় মানুষের দ্বারে দ্বারে।

অসহায় বিধবা হাফেজার বাড়ি লক্ষ্মীপুরের কমলনগর উপজেলার হাজিরহাট ইউনিয়নের চর জাঙ্গালীয়া গ্রামে। কিন্তু তার কোনো ভিটাবাড়ি নেই। নেই কোনো আত্মীয়। তবে তিন ছেলে আর দুই মেয়ে থাকলেও মাকে ছেড়ে প্রায় ৩০ বছর আগে অজানার উদ্দেশ্যে চলে যান। বর্তমানে তারা কোথায় আছেন জানেন না এ বৃদ্ধা মা।

সন্তানরা ফিরে আসবে- এ আশায় ২৫ বছর ধরে স্বামীর মুখ চেয়ে অপেক্ষায় ছিলেন হাফেজা। কিন্তু বিধিবাম, চার বছর আগে তাকে ছেড়ে পৃথিবী থেকে স্বামীও চলে যান। বয়সের ভারে হাঁটাচলা তার পক্ষে অনেকটাই কষ্টকর। এভাবেই কষ্টে দিন পার করছেন ভূমিহীন এ বৃদ্ধা।

নেই মাথা গোঁজার ঠাঁই। ৭০ বছর বয়সে থাকছেন অন্যের জায়গায়। লতাপাতা মোড়ানো ছোট একটি ঝুপড়ি ঘরেই দিন কাটছে তার। দুর্বিষহ জীবন হলেও কিছুই করার নেই। কেউ দিলে পেটে ভাত জোটে, না হয় অনাহারে কাটাতে হয় দিন।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, চর জাঙ্গালিয়া গ্রামের হাফেজিয়া মাদরাসার উত্তর পাশে আব্দুল কাদেরের বাগানে কলা পাতা, নারিকেল পাতা, সুপারির পাতায় মোড়ানো একটি ঝুপড়ি ঘর। সেখানেই থাকছেন বৃদ্ধা হাফেজা। দিনের আলোয় বাতি ছাড়া কিছুই দেখা যায় না। সেখানে এলোমেলো পুরোনো কাপড়-চোপড়। এক কোণে চুলা, আর চারপাশে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা হাড়ি-পাতিল। এসব নিয়েই তার একাকী সংসার।

জানা গেছে, প্রতিবেশীদের সহানুভূতি নিয়ে বেঁচে থাকতে হচ্ছে হাফেজা বেগমকে। ২৫ বছর ধরে স্থানীয় আব্দুল কাদেরের বাগানে হাফেজার বসবাস।

স্থানীয় বাসিন্দা আরাফাত বলেন, আসলেই হাফেজা বেগমের কোনো জায়গা নেই। তাই সরকারের কাছে আমাদের দাবি তাকে যেন জায়গাসহ একটা ঘর উপহার দেওয়া হয়। তাহলেই শেষ জীবনে কিছুটা হলেও সুখ পাবেন তিনি।

কমলনগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা কামরুজ্জামান বিজয় বলেন, ইউপি চেয়ারম্যানের মাধ্যমে খোঁজখবর নেব। সুবিধাবঞ্চিত হলে অবশ্যই তাকে সরকারি ঘরের ব্যবস্থা করে দেওয়া হবে।

এই বিভাগের আরও খবর